রুদ্র ম আল-আমিন এর ছোটগল্প,,
“রুদ্র এবং তাঁর মৃতদেহ”

রুদ্র কায়স্থ পরিবারের সন্তান। গতকাল গভীর রাতে,তিনি স্বর্গবাসী হইয়াছেন। বাপের একখন্ড ভিটেমাটি আছে।তাহাতে তাহার একটা জরাজীর্ণ কুড়েঘর রহিয়াছে। বয়স চল্লিশ বছর পেরুতেই তিনি রোগাক্রান্ত হইয়া যান। রুদ্রের, দশ বছর বয়সেরএকটি ছেলে আছে। সকাল হইবার পূর্বেই,বিছানা সমেত রুদ্রকে বারান্দায় মাদুর পাতিয়া শয্যা করা হইল।
আত্বীয় বলিততে, রুদ্রের এক জ্যাঠতুতো ভাই আছে।
তিনি ভোর হইবার আগেই আসিয়াছেন। মতিলাল,শবের দাহ্ কার্য সম্পন্ন করিবার জন্য, বেশ তোরজোর করিতে লাগিলেন।
বাড়ির দক্ষিন কোণে একখানি আমগাছ পোতা ছিল। পাড়ার উঠতি ছেলেরা, তাহা সকাল বেলা, উহা কাটিয়া টুকরো টুকরো করিয়াছেন।
এখুন কলাগাছ দ্বারা, খাটিয়া বানানোর প্রস্তুতি চলিতেছে।
রুদ্রের জ্যাঠতুতো দাদা, একখানা ভাংগা চেয়ারে বসিয়া, মাথাখানি নিচের দিকে ঝেকে বসিয়া রহিয়াছেন। ঠিক সেই সময় রুদ্রের ছেলে,
বিষ্ণু, তার মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছিলেন।
তার মা সাবিত্রী তখুন স্বামী হারা হয়ে, প্রায় অর্ধপাগল হইয়া ছিল।
বিষ্ণু, তার মাকে বারবার জিগ্যেস করছিল যে,,
ঃ মা আমি কি শ্মশানে যাব?
কিন্ত সাবিত্রী, এতটাই বেহুশ ছিল যে, বিষ্ণু কি বলিতেছে তাহা তাহার বোধগম্য হইতেছিল না।
এরপর, রুদ্রের জ্যাঠতুতো দাদা, ভাংগা চেয়ার হতে উঠিয়া, বাছাকে কোলে তুলিয়া নিলেন আর বললেনঃ
আমরা সব্বাই যাব। তুমিই তো চিতায় অগ্নিদাহ করবে। কাঁদতে হয় না বাবা। রামকে ডাকো,,,,
বিষ্ণু জানে না,,
রামকে কিভাবে ডাকতে হয়। আর রামই বা কে?
বিষ্ণু কহিল,
ঃ জ্যাঠাই, রাম কি বাবার কাছে আসবে?
এই নাবালক ছেলেটির কথায়, মতিলাল আর কোন উত্তর করিল না।

সকাল তখুন, আনুমানিক প্রথম প্রহর কাটিয়া, দ্বিপ্ররে পা দিয়াছে।
শতশত লোকজন ভীর জমিয়াছে, রুদ্রের শব একনজর দেখিবার জন্য। সেইসময় গায়ানের দল, ঢোল সমেত হাজির হইল উঠোনে।
বয়স্কা মহিলারা আগে থেকেই, বাংলায় লেখা, চটি বই গীতা পাঠ্য করিতেছিলেন। কখুনো, কখুনো তাদেন মুখে, উলুধ্বনি শোনা যাচ্ছিল।
ঠাকুর মশাই উপস্থিত হইয়াই, রুদ্রের শব খাটিয়ায় তুলিবার জন্য, তারাহুরো করিতে লাগিলেন।
মতিলালকে ডাকিয়া, শেষবারের মত তাহার দেহ, তল্লাশি করিবার জন্য বলিলেন।
মতিলাল, রুদ্রের শবখানি হাতরাতে লাগিলেন। ঠিক সেই মুহুর্তে, রুদ্রের কোমরে বাঁধা, একটা পুটলির মত মাধুলি পাওয়া গেল।
এবং উপস্থিত সকলেরই, তাহা দৃষ্টিগোচর হইল।
মাধুলি খুলিয়া যাহা দেখিতে পাওয়া গেল। তাগা বলিবার নয়।
তোবু বলিতেছি, ,, ,
মাদুলির মধ্যে একটা মোহর এবং একখানি চিরকুট দেখা গেল।
সম্ভত চিরকুটটি নিজেই লিখিয়াছে। ভাংগা ভাংগা হাতের লেখা। লেখার শেষ বক্তব্য হইল,
আমাকে দাহ্ করিও না। কারন, আমি দাহ্ দেখিয়া ভীত হই। যদি মুসলমানের ন্যায় কবরস্থ করা হয়, তবেই আমি ধন্য হইব।

পাঠকগণ,
(প্রতিটি মানুষের শেষ ইচ্ছা কি। তাহা নিজে ব্যাথিত অন্য কাহারো বলা সম্ভব না।
তবে শেষ ইচ্ছা, আমার মতে,খুব কম মানুষেরই পূর্ণ হয়),

রুদ্রের মৃতদেহ লইয়া, একটা হৈ চৈ পড়িয়া গেল। যেহেতু পাড়ায় পাড়ায়, তাহা রটিয়া গেছে। ঠিক সেই কারনে, রুদ্রের শব, কেহ দাহ্ করিবার, সাহস দেখাইতেছিল না।
এর পর, হিন্দু ও মুসলিম অধিপতিদের দেন দরবার দেখিলাম।

শেষমেষ,,, সন্ধের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে,
রুদ্রের শব, কলাগাছের ভেলায় তুলিয়া,,
রাম নাম সাতহে ,, রাম নাম সাতে,,,, বলিতে, বলিতে, শ্মশান অবধি নেয়া হইল।
January 16.2020